পৃষ্ঠাসমূহ

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

বৃহস্পতিবার, ৯ আগস্ট, ২০১২

ভরসা থাকুক...


সামান্যতম পরিচয়, তার সঙ্গীত-পরিচালনায় একটা সিনেমার recording এ গান গেয়েছিলাম আরও বেশ কয়েকজন বন্ধুর সাথে। Play back এর কোনোরকম অভিজ্ঞতা না থাকায় বেশ ভয়ে ভয়েই গেছিলাম studio তে। কিন্তু সেখানে পৌঁছতেই ভয়টা একদম ভ্যানিশ হয়ে গেল... অসম্ভব রকম friendly atmosphere, শীতের সকালে বেশ একটা পিকনিক পিকনিক পরিবেশে কাজে একদম চাপ নেই, কিন্তু গতি আছে যথেষ্টই। ফলে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই গান recording শেষ, তারপর সবাই মিলে জমিয়ে আড্ডা, খাওয়াদাওয়া!

বছর ঘুরে এখন বর্ষা, facebook এ একটা friend request পাঠিয়েছিলাম, আমি খুব অকারণ বাজে বকি (recording এর দিনও তার অন্যথা হয়নি!), তাই হয়তো আমায় মনে থাকলেও থাকতে পারে, এই ভরসায়! Request accepted, বুঝলাম আমার অনুমান নির্ভুল! Dissertation এ একটা সাংঘাতিক গালভরা topic বেছে আমি এখন বাস্তবিকই নাকের জলে, চোখের জলে... ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি অবস্থা! সেজন্য একজন Music Director এর Interview দরকার ছিল, আশায় বুক বেঁধে অনুরোধ করলাম একদিন একটু সময় দেওয়ার জন্য। ব্যস্ততার ওজুহাতে না বলে দেওয়াটাই সম্ভবত বর্তমানে Industry-র প্রচলিত রীতি, কিন্তু তিনি সে পথের পথিক নন একেবারেই। প্রায় সাথে সাথেই সময় ঠিক করে দিলেন। তিনি প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়, আমাদের প্রবুদ্ধদা।

নির্ধারিত দিনে Interview, তারপর চা বিস্কুট সহযোগে আড্ডা। নিজে থেকেই জিজ্ঞাসা করলেন, এরকম একটা টপিক নিয়ে কাজ করছি কেন, কাজ কতটা এগিয়েছে, আরও কার কার Interview দরকার! তারপর নিজের পরিচিত মহল থেকে বেশ কিছু অত্যন্ত দরকারি Interview ব্যবস্থা করে দিলেন সাথে সাথেই। আমি মনে মনে ভাবছিলাম, এই Interview গুলো যোগার করার জন্য কতজনকে অনুরোধ জানিয়েছি কতবার! কেউ আজ দেখছি, কাল দেখছি বলে পাশ কাটিয়েছে, কেউবা বন্ধুর মুখোশ পরে নিজের স্বার্থের ঝুলি খুলে বসেছে! বাড়িতে গঞ্জনা শুনতে হয়েছে, এই লাইনটাই নাকি এরকম, আমি নাকি জেদ করে সিনেমা নিয়ে পড়ে থেকে নিজের ভবিষ্যৎ জলাঞ্জলি দিচ্ছি! এ কদিনে নানা অভিজ্ঞতায় নিজের মনের কোণেও এই ভাবনাগুলো উঁকি দিচ্ছিল মাঝে মাঝেই, প্রবুদ্ধদা এক লহমায় সেগুলোকে অনেক দূরে সরিয়ে দিয়ে মনটাকে হালকা করে দিলেন।


ঘরে বাইরে কতটা লড়াই করে এই কাজে নিজেকে টিকিয়ে রেখেছি, সেটা খুব কাছের কয়েকজন মানুষ ছাড়া কেউ জানে না। প্রবুদ্ধদার সাথে চা খেতে খেতে কথা হচ্ছিল, Rotterdam Film Festival এর অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে বলছিলেন Corporate World কি ভয়ঙ্কর ভাবে প্রত্যেকটি শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করতে বদ্ধপরিকর, সিনেমাও তার ব্যতিক্রম নয়। আর সাথে সাথেই উঠে আসছিল অন্য আর এক সংগ্রামের কাহিনী, সেই সব মানুষগুলোর কথা যারা দিনের বেলায় McDonald’s এ কাজ করে রাত্রে সিনেমা ভাবে! বলে – Producer এর দরকার নেই, নিজেরা আধপেটা খেয়ে পয়সা বাঁচিয়ে সিনেমা বানিয়েছি! সেই অনেক দুরের মানুষগুলোর সাথে সেই মুহূর্তে কেমন একটা নিবিড় আত্মীয়তা খুঁজে পেলাম। খুঁজে পেলাম নিজের ভালবাসার বিষয়কে আঁকড়ে ধরে কাজ করে যাবার মনের জোর। আপনাকে ধন্যবাদ, প্রবুদ্ধদা। আপনার মত মানুষেরা যতদিন আছেন, ততদিন আমার মত নতুন মুখেরা নির্ভয়ে Industry তে কাজ করতে আসবে, সিনেমাকে ভালোবেসে। আমার প্রণাম নেবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন